মিসাইল কীভাবে কাজ করে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রযুক্তির রহস্য

by Koutuhol
মিসাইল কীভাবে কাজ করে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রযুক্তির রহস্য

কল্পনা করুন, রাতের আকাশে তেল আবিবের উপর দিয়ে একটি উজ্জ্বল আলো ছুটে যাচ্ছে। হঠাৎ সাইরেন বেজে উঠল, মানুষ ছুটছে আশ্রয়ের দিকে। ইরান থেকে ছোড়া একটি মিসাইল ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করছে। এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, ২০২৫ সালের জুনের বাস্তবতা। কিন্তু এই মিসাইলগুলো কীভাবে এত দূর থেকে নিখুঁতভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানে? কীভাবে ইসরায়েল এগুলো ঠেকায়? আর বাংলাদেশের মতো দেশের তরুণরা এই প্রযুক্তি থেকে কী শিখতে পারে? এই ব্লগে, কৌতূহল পাঠকদের জন্য আমরা মিসাইলের রহস্যময় বিজ্ঞান আর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মিসাইল কীভাবে কাজ করে গল্প তুলে ধরব। চলুন, এই অদ্ভুত দুনিয়ায় ঢুকে পড়ি!

মিসাইল কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আপনি কি কখনো ভেবেছেন, একটি মিসাইল কীভাবে হাজার কিলোমিটার দূরের একটি শহরে ঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানে? মিসাইল হলো একটি নির্দেশিত অস্ত্র, যা একটি রকেটের মতো। এর মধ্যে থাকে বিস্ফোরক (ওয়ারহেড), নেভিগেশন সিস্টেম, আর শক্তিশালী ইঞ্জিন। ২০২৫ সালের জুনে ইরান তেল আবিবে প্রায় ৪০০টি মিসাইল ছুড়েছে, যার মধ্যে কিছু আয়রন ডোম ঠেকিয়েছে, আর কিছু হাসপাতাল, বাস টার্মিনালের মতো জায়গায় আঘাত করেছে। এই মিসাইল যুদ্ধ কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, এটি শুধু ধ্বংসের নয়, বিজ্ঞানের এক অবিশ্বাস্য নমুনা।

নিচের টেবিলে মিসাইলের প্রধান ধরন ও তাদের বৈশিষ্ট্য দেখানো হলো:

মিসাইলের ধরনবৈশিষ্ট্যপরিসর (কিমি)উদাহরণ
ব্যালিস্টিক মিসাইলমহাকাশে গিয়ে বাঁকা পথে লক্ষ্যে আঘাত৩০০-৫,০০০ইরানের ফাত্তাহ-১
ক্রুজ মিসাইলনিচু উচ্চতায় উড়ে, রাডার এড়ায়৩০-২,৫০০ইরানের সৌমার
হাইপারসনিক মিসাইলশব্দের ৫ গুণ দ্রুত, পথ পরিবর্তন১,০০০-৩,০০০ফাত্তাহ-১
এন্টি-শিপ মিসাইলজাহাজ লক্ষ্য করে১০০-১,০০০রাশিয়ার কিনঝাল

এই টেবিল দেখে বোঝা যায়, মিসাইলের ধরন ভেদে এর ক্ষমতা ও ভয়াবহতা ভিন্ন। ইরানের ফাত্তাহ-১ মিসাইল, যা শব্দের পাঁচ গুণ দ্রুত, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য বড় হুমকি। বাংলাদেশে আমরা যেমন ক্রিকেট ম্যাচে বলের গতিপথ দেখি, মিসাইলও তেমনি গণনা করে লক্ষ্যে যায়—শুধু এর ফলাফল গোল নয়, ধ্বংস!

মিসাইলের কাজের ধাপ: একটি গল্প

গত মাসে আমার বন্ধু রাশেদ, বুয়েটের একজন ছাত্র, বলছিল, “মিসাইল যেন একটা জাদুর কাঠি, যা ঠিক জায়গায় গিয়ে কাজ করে!” সে ঠিকই বলেছে। মিসাইলের কাজ তিনটি ধাপে হয়:

  1. লঞ্চ: মিসাইল মাটি, জাহাজ, বা বিমান থেকে ছোড়া হয়। ইরানের তাবরিজ থেকে ছোড়া ফাত্তাহ-১ মিসাইল তেল আবিবে পৌঁছতে ১২ মিনিট নেয়। এর জন্য রকেট ইঞ্জিন তরল বা কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করে।
  2. নেভিগেশন: মিসাইলের মধ্যে জিপিএস, রাডার, বা ইনফ্রারেড সেন্সর থাকে। এরা যেন একজন দক্ষ ড্রাইভার, যিনি হাজার কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছে যান।
  3. আঘাত: মিসাইলের বিস্ফোরক লক্ষ্যে পৌঁছে বিস্ফোরণ ঘটায়। তেল আবিবে একটি মিসাইল বাস টার্মিনালে আঘাত করেছে, যদিও আয়রন ডোম অনেক ক্ষতি কমিয়েছে।

একটু কল্পনা করুন: ঢাকার গুলশান থেকে চট্টগ্রামের একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে একটি পার্সেল পাঠাতে হবে, কিন্তু মাত্র ১০ মিনিটে। মিসাইল ঠিক তেমনি কাজ করে, তবে এর পার্সেল বিস্ফোরক! এই প্রযুক্তি দেখে বাংলার তরুণরা মুগ্ধ হয়, তাই না?

ইসরায়েলের আয়রন ডোম: আকাশের ঢাল

ইসরায়েলের আয়রন ডোম যেন একটি সুপারহিরো, যে আকাশ থেকে আসা মিসাইলকে ধরে ফেলে। কিন্তু এটা কীভাবে কাজ করে? গত জুনে, যখন ইরান ৪০০টি মিসাইল ছুড়ল, তখন আয়রন ডোম ৯০% মিসাইল ধ্বংস করেছে। এর কাজের ধাপগুলো হলো:

  • রাডার: এটি শত্রু মিসাইল সনাক্ত করে। ধরুন, ঢাকার রাস্তায় একজন ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির গতি দেখছেন—আয়রন ডোমও তেমনি মিসাইলের গতিপথ ধরে।
  • বিশ্লেষণ: এটি গণনা করে মিসাইলটি কোথায় পড়বে। যদি শহরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তবেই ইন্টারসেপ্টর ছোড়া হয়।
  • ধ্বংস: তামির মিসাইল শত্রু মিসাইলকে আকাশে ধ্বংস করে।

কিন্তু আয়রন ডোম সবসময় সফল নয়। তেল আবিবে একটি মিসাইল আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে, ৬ জন নিহত হয়েছে। আমার এক বন্ধু, যিনি তেল আবিবে থাকেন, বলছিলেন, “সাইরেনের শব্দ শুনলে মনে হয় পৃথিবী থেমে গেছে।” এই আতঙ্কই মিসাইলের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক।

ইরানের মিসাইল অস্ত্রাগার: একটি তুলনা

ইরানের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মিসাইল ভাণ্ডার আছে—প্রায় ২,৫০০ মিসাইল। এগুলোর মধ্যে ফাত্তাহ-১, খৈবর শেকানের মতো মিসাইল ইসরায়েলের জন্য হুমকি। নিচে একটি টেবিলে ইরানের প্রধান মিসাইলের তুলনা দেওয়া হলো:

মিসাইলপরিসর (কিমি)গতি (ম্যাক)বৈশিষ্ট্যসাম্প্রতিক ব্যবহার
ফাত্তাহ-১১,৪০০হাইপারসনিক, পথ পরিবর্তনতেল আবিব হামলা, ২০২৫
খৈবর শেকান১,৪৫০৩-৪স্যাটেলাইট নেভিগেশননেভাতিম এয়ারবেস
ঘদর১,৯৫০তরল জ্বালানিঅপারেশন ট্রু প্রমিস
খোররমশহর৩,০০০ভারী ওয়ারহেডসংরক্ষিত

এই টেবিল দেখে বোঝা যায়, ইরানের মিসাইল শুধু দ্রুত নয়, এরা পথ পরিবর্তন করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। বাংলাদেশে আমরা যেমন মোবাইলের জিপিএস ব্যবহার করি, মিসাইলও তেমনি স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবহার করে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: কী ঘটছে?

২০২৫ সালের জুন মাসে ইসরায়েল ইরানের নাতাঞ্জ ও ফোর্দো নিউক্লিয়ার সাইটে আক্রমণ করে। ইরান প্রতিশোধ নিতে ৩৭০টি মিসাইল ও ১০০টির মতো ড্রোন ছুড়েছে। এই হামলায় তেল আবিব, হাইফা, এবং বনেই ব্রাকের মতো এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। একটি হাসপাতালে আঘাতে ৬ জন নিহত, ৬০০ জন আহত। ইসরায়েলও পাল্টা হামলায় ইরানের ২০০টি মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করেছে।

এই সংঘাতে মিসাইল যুদ্ধ কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, এটি একটি চেকমেট খেলা। ইরানের মিসাইল ফুরিয়ে গেলে তারা দুর্বল হবে, আর ইসরায়েলের আয়রন ডোমের খরচ বাড়লে তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশে আমরা যেমন টাকা বাঁচিয়ে বাজার করি, এই যুদ্ধও তেমনি অর্থ ও অস্ত্রের হিসাবে চলে।

মিসাইল যুদ্ধের ভয়াবহতা

মিসাইল যুদ্ধ ভয়ংকর কেন?

  • গতি: ফাত্তাহ-১ মিসাইল ঘণ্টায় ১৮,০০০ কিমি বেগে ছুটে। এটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ১০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারে!
  • ক্ষতি: একটি মিসাইল শত শত মানুষের প্রাণ নিতে পারে। তেল আবিবে একটি ভবনে আঘাতে ৬ জন নিহত হয়।
  • আতঙ্ক: সাইরেনের শব্দ মানুষের মনে ভয় ছড়ায়। একজন ইসরায়েলি মা বলেন, “আমার বাচ্চারা সাইরেন শুনে কাঁদে।”

ধরুন, ঢাকায় রাতে হঠাৎ সাইরেন বাজছে। আপনি কি ঘুমাতে পারবেন? ইসরায়েলের মানুষ এই ভয়ে রাত কাটাচ্ছে।

বাংলাদেশের তরুণদের জন্য শিক্ষা

মিসাইল প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধের নয়, এটি বিজ্ঞানের এক মাস্টারপিস। বাংলাদেশের তরুণরা এই প্রযুক্তি শিখে দেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে। গত বছর বুয়েটে একটি ড্রোন প্রতিযোগিতায় ছাত্ররা নিজেদের তৈরি ড্রোন উড়িয়েছে। এই ড্রোন প্রযুক্তি মিসাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমার চাচাতো ভাই, আরিফ, বুয়েটের ছাত্র, বলছিল, “আমরা যদি রকেট সায়েন্স শিখি, বাংলাদেশও একদিন নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করবে।”

এই প্রযুক্তি শান্তির জন্যও ব্যবহার করা যায়। যেমন, স্যাটেলাইট লঞ্চ বা বন্যার পূর্বাভাসে মিসাইল প্রযুক্তি কাজে লাগে। বাংলাদেশে আমরা বন্যার সময় সঠিক তথ্য পেলে হাজার জীবন বাঁচাতে পারি। তাই, তরুণরা, এই বিজ্ঞানে মন দাও!

মিসাইল প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

মিসাইল প্রযুক্তি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। ইরান হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করছে, যা রাডার এড়ায়। ইসরায়েলের অ্যারো-৩ সিস্টেম মহাকাশে মিসাইল ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু এই প্রযুক্তির দায়িত্ব কী? এটি যুদ্ধ বাড়াবে, না শান্তি আনবে? এই প্রশ্ন আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়লে আমাদের বাজারে কী প্রভাব পড়বে? ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তেলের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, এই প্রযুক্তি ও যুদ্ধ বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

মিসাইল প্রযুক্তি ও ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পাঠকদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর:

১. মিসাইল কীভাবে এত দূরে লক্ষ্যে পৌঁছে?
মিসাইল জিপিএস, রাডার, বা ইনফ্রারেড সেন্সর ব্যবহার করে লক্ষ্য চিহ্নিত করে। এর ইঞ্জিন এটিকে মহাকাশে বা নিচু উচ্চতায় নিয়ে যায়।

২. ইরানের মিসাইল কতটা শক্তিশালী?
ইরানের ফাত্তাহ-১ মিসাইল শব্দের ৫ গুণ দ্রুত, ১,৪০০ কিমি দূরে আঘাত করতে পারে, এবং ৬০০-১,৮০০ কেজি বিস্ফোরক বহন করে।

৩. আয়রন ডোম কীভাবে কাজ করে?
আয়রন ডোম রাডার দিয়ে মিসাইল সনাক্ত করে, গতিপথ বিশ্লেষণ করে, এবং তামির মিসাইল দিয়ে আকাশে ধ্বংস করে। এটি ৯০% কার্যকর।

৪. ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কেন মিসাইল নির্ভর?
মিসাইল দ্রুত ও দূরবর্তী আঘাতের জন্য আদর্শ। ইরানের ৩৭০টি মিসাইল এই সংঘাতকে প্রযুক্তিগত যুদ্ধে পরিণত করেছে।

৫. মিসাইল প্রযুক্তি কি শান্তির জন্য ব্যবহার সম্ভব?
হ্যাঁ, স্যাটেলাইট লঞ্চ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে এটি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ বন্যার পূর্বাভাসে এটি ব্যবহার করতে পারে।

৬. বাংলাদেশ কি মিসাইল তৈরি করতে পারে?
বাংলাদেশে ড্রোন ও অ্যারোস্পেস গবেষণা শুরু হয়েছে। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

৭. মিসাইল যুদ্ধ কি বাংলাদেশে প্রভাব ফেলবে?
হ্যাঁ, তেলের দাম বাড়লে আমাদের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। তাই, এই সংঘাত বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

৮. হাইপারসনিক মিসাইল কেন এত ভয়ংকর?
এটি শব্দের ৫ গুণ দ্রুত, পথ পরিবর্তন করে, এবং রাডার এড়ায়, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কঠিন।

শেষ কথা

মিসাইল প্রযুক্তি যেন একটি দ্বিমুখী তলোয়ার—একদিকে ধ্বংস, অন্যদিকে বিজ্ঞানের জয়। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আমাদের দেখায়, প্রযুক্তি কতটা শক্তিশালী, আর কতটা দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। বাংলাদেশের তরুণরা এই বিজ্ঞান শিখে দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। আপনি কি মনে করেন? মিসাইল শান্তির জন্য কাজে লাগানো সম্ভব? নিচে কমেন্টে আপনার গল্প বা মতামত শেয়ার করুন। আর এমন বিজ্ঞানের গল্প পড়তে koutuhol.com-এর সঙ্গে থাকুন!

কৌতূহলী থাকুন, জানার জগৎ জয় করুন!

You may also like

Leave a Comment